একটা Interview দিতে হবে..তাও exclusive, আমরা বললাম..
এক মুখ দুষ্টুমির হাসি নিয়ে বললেন, ‘ আমিও কিন্তু আপনাদেরটা নেবো ! Floorএই একটু অপেক্ষা করুন, এখুনি আসছি।’
অভিনয়টা ইনি ভালোই করছেন।
আমাদের টলিউডের নতুন সেনসেশন..
এবার সরাসরি ওনার মুখ থেকে….
প্রশ্ন : দাদা নমস্কার, খুব ভালো ভালো কাজ করার জন্য অনেক অভিনন্দন..আপনি এখন..
সঞ্জীব : এক মিনিট এক মিনিট..আরে ভাই আমার নাম সঞ্জীব, আপনাদের পুরো নাম বলুন ? না হলে জমবে কি করে.. হা হা হা (হাসি)
প্রশ্ন : নিজেদের পুরো নাম বলে..ঠিক আছে দাদা..? এবার বলি ?
আপনার বাড়ি হাওড়ায় জানি কিন্তু হাওড়ার কোথায় ?
সঞ্জীব : সালকিয়া। হাওড়া ষ্টেশন থেকে দু কিলোমিটার।
প্রশ্ন : আউটডোর ছাড়া সব Floor ই তো কলকাতায়, আসা যাওয়া করতে কষ্ট হয় না ?
সঞ্জীব : আরে, সে কি কথা ? কষ্ট না করে কাজ করবো কি করে ?
চাকরি করলে আমার অফিস যদি কলকাতায় হতো তখন ? এখন আমি যেখানে যেখানে কাজ করি সেটাই আমার অফিস হয়ে যায়..
বাড়ি হাওড়ায় কিন্তু এমন এক জায়গায় যেখান থেকে কলকাতা ঢুকতে 5 মিনিটও লাগে না। ফলে কোলকাতায় আসা যাওয়া করতে কোনো অসুবিধা হয় না। কারন হাওড়া হলেও এটা কলকাতাই বলা যায়। ফলে স্ট্রাগল করতে একটু সুবিধা হয়।
প্রশ্ন : বাড়িতে কে কে আছেন ?
সঞ্জীব : বাড়িতে থাকেন বাবা মা এক পিসি আর আমি।
প্রশ্ন : আপনার স্ত্রী ?
সঞ্জীব : হা হা করে হেসে..সে কি আপনাদের কাছে এসব খবর নেই !
প্রশ্ন : না..না মানে..দাদা..আসলে..
সঞ্জীব : আমার কোনো স্ত্রী নেই । বাবা মা পিসি কে নিয়েই থাকি। প্রত্যেকেরই বয়েস হয়েছে। বাড়িতে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ করার মানুষ একজনই…আমি। আমিই রোজ রান্না করি.. আজও করে এসেছি। অভ্যেস হয়ে গেছে । কাজের লোক না আসলে প্রয়োজনে বাসনও মাজি। হয়তো আপনারাও করেন কিন্তু বলেন না, লোকে কি বলবে এই ভেবে। আরে মশাই এগুলো হোলো জীবনের খুব প্রয়োজনীয় অধ্যায়..করতে হয়। আপনি শীল নোড়ায় বাটনা বাটতে, মাছ কাটতে পারেন ?
প্রশ্ন : মানে…!
সঞ্জীব : আমি পারি এই সব। শুনুন ভাই, কাজের ভাগ আমরা করেছি। কাজের আবার ছেলে মেয়ে কি ? হয়তো মেয়েরা বেশি কিন্তু ছেলেরাও দশভূজা হয়।
প্রশ্ন : এটা আমরা অভিনেতা সঞ্জীব ব্যানার্জীর এক না জানা রূপ দেখছি।
আমরা অভিনেতা সঞ্জীব ব্যানার্জীকে চিনি কিন্তু এতো ঘরোয়া সঞ্জীব ব্যানার্জী কোনো মনের মানুষ পাইনি ?
সঞ্জীব : অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি ভাই। যদি সে আসে…
প্রশ্ন : মানে !
আপনি কাউকে ভালোবাসেন ? বিয়ে করছেন কবে ?
সঞ্জীব : জানিনা। সব ভগাদা জানে কি হবে…হা হা হা (হাসি)
প্রশ্ন : হা হা হা..
তার সম্পর্কে যদি কিছু বলেন। কে সে আমাদের industry র কেউ ! তার নাম ?
সঞ্জীব : সেটা বলবো না। যদি সে অন্যকারোর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে তো হয়তো তার অসুবিধা হবে। বললে তো বলে দেওয়াই যায় কিন্তু…
তার আসল নাম বললাম না..
তবে তাকে আমি বৃষ্টি বলে ডাকি।
প্রশ্ন : এত ভালোবাসা অথচ….
সঞ্জীব : অনেকদিনের ভালোবাসা ভাই। কিন্তু সে আমায় ভুল বুঝে আমার থেকে দূরে সরে আছে। জানিনা তার ভুল ভাঙ্গবে কিনা। যদি কোনোদিনও সময় আসে তখন না হয় বলবো ?
যাই হোক আমরা অন্য প্রসঙ্গে আসি..
প্রশ্ন : অভিনয় জগতে আসা কিভাবে ?
সঞ্জীব : অভিনয় আমার প্যাশন..একদম মন থেকে প্রচণ্ড ভালোবেসে করি। বলা যেতে পারে অভিনয় আমার প্রথম গার্লফ্রেন্ড।
কিন্তু অভিনেতা হিসাবে আমার জীবন শুরু হয়নি এমনকি কোনোদিন ভাবিও নি যে অভিনেতা হবো। কিন্তু ওটা হয়তো রক্তেই ছিলো।
আমি একজন ব্যবসায়ী ছিলাম..এখনও একজন ছোট ব্যবসায়ী কিন্তু অভিনয় আমার পেশা..আমার ধ্যান, জ্ঞান সবকিছুই।
শুনেছি আমার ঠাকুরদা নিজে অভিনয় করতেন না কিন্তু করাতেন। উনি নাটক লিখতেন এবং চরিত্র অনুযায়ী অভিনয় করে দেখিয়ে দিতেন।
প্রশ্ন : তার মানে জিনগত একটা ব্যপার রয়ে গেছে যা রক্তে মিশে আছে।
সঞ্জীব : একদম..
প্রশ্ন : কাজের শুরু কিভাবে ?
সঞ্জীব : আমার কাজের শুরু আকাশ আটে..উমার সংসার দিয়ে..
আমার অতি প্রিয়, সম্মানীয় অ্যাক্টর/ডিরেক্টর অনিন্দ সরকার আমায় প্রথম কাজের সুযোগ দেন।
প্রশ্ন : তারপর ?
সঞ্জীব : তারপর ধীরে ধীরে অনেক জায়গায়, অনেক চরিত্রে কাজ করি। কোথাও বাবা, কোথাও ডক্টর আবার কোথাও বা মুসলিম ছেলের চরিত্রে।
শেষ মেগার কাজ আলোছায়া ..তে। একজন কেমিষ্ট হয়ে কাজ করি সেখানে।
পরে আরও কিছু মেগায় যেমন রিমলি, বীণাপানি, এমনকি মিঠাই থেকেও ডাক পাই কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য..ডাক আসলেও কাজ করতে পারিনি, সেই সময় অন্য শুট থাকায়। আর মিঠাইয়ের সময় মা অসুস্থ ছিলেন। তাই আর হ্যাঁ বলতে পারিনি।
অভ্যাস না থাকলেও লকডাউনে কিছু হোমশুট করি যেমন জনসেবা, কেষ্ট, বড়মেয়ে, মার্ডার ফর মাস্ক এবং আরও কিছু। যেগুলো নানান ইউটিউব চ্যানেলে চলেছে এবং এখনও চলে।
জীবনের প্রথম টেলিফিল্ম..কোন এক গাঁয়ের কথা..যা মিউজিক বাংলা, ধুম মিউজিকে দেখানো হয়। দু বার করে। TRP নাকি খুব ভালো ছিলো।
পরের কাজ..তরী..বাল্য বিবাহের বিরূদ্ধ্বে..যার জন্য আমি একটি অ্যাওয়ার্ড পাই। এটাও ধুম মিউজিক, মিউজিক বাংলায় দেখানো হয়..এছাড়া প্রায় ১৩ টা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে নমিনেটেডও হয় তরী।
এরপর হল রিলিজের জন্য অভিনয় করি.. আদর্শ..তে। একজন রিটায়ার্ড আদর্শবান মাষ্টার মশাইয়ের আদর্শ নিয়ে গল্প এবং নাম ভূমিকায় আমি।
পরবর্তী ছবি.. একটি চিঠির গল্প.. যার একটা প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আমি কাজ করেছি এবং এটির ট্রেলার ভারত ও বাংলাদেশে একই সঙ্গে মুক্তি পেতে চলেছে আগামী মহালয়ার দিন।
বাংলাদেশের চ্যানেল 6 এই ছবির মিডিয়া পার্টনারও।
বোম্বের একটি হিন্দি ফিল্মে কাজ করেছি ছোট্ট একটি চরিত্রে।
এছাড়া করেছি ওয়েব সিরিজের কাজ..যেখানে আমি ছিলাম একজন মারকুটে পুলিশ অফিসার।
কথা কম.. ডান্ডা চলতো বেশি।
কিছু ফিল্মের কাজ ফাইনাল হয়ে আছে.. যার শুট শুরু হবে পূজোর পর। নাম বলা বারণ..তাই এখনই বলতে পারবো না।
মালয়ালম ফিল্ম থেকে কাজ করার অফার আছে। ওখানকার পরিস্থিতি ঠিক হলে..হয়তো কাজ করবো।
কাজের অফার আছে..বাংলদেশ থেকেও…। নিশ্চই কাজ করবো।
প্রশ্ন : ভবিষতে কার কার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে আছে ?
সঞ্জীব : অনেকের সঙ্গে। নিজেকে ধন্য মনে করবো যদি ডিরেক্টর সন্দীপ রায় কোনদিনও কোনো কাজের জন্য আমায় যোগ্য মনে করেন। কাজ করার খুব ইচ্ছে ডিরেক্টর কৌশিক গাঙ্গুলী, ডিরেক্টর রাজ চক্রবর্তী, গৌতম ঘোষ, অপর্ণা সেন, পরমব্রত..এনাদের মতো মানুষদের কাছে।
যদিও আমি কাউকে ছোট ভাবিনা এবং কাজের ব্যপারে আমি কাজটাকেই ভালোবাসি ..কে ডিরেক্ট করছেন দেখিনা।
তাই ছোট, বড়, নামি, অনামি.. সব ডিরেক্টরই আমার পছন্দের। সকলের কাছেই আমি কাজ করতে চাই।
প্রশ্ন : মেগায় আর কাজ করবেন না ?
সঞ্জীব : আরে, নিশ্চই করবো। সুযোগ পেলেই। খুব তাড়াতাড়ি আপনারা আমায় দেখতে পাবেন। আমি স্নেহাশীষদার লেখার খুব ভক্ত। স্নেহাশীষবাবু (ব্লুজ), শৈবাল বাবু (ম্যাজিক মোমেন্ট) র কাছে কাজ করতে চাই।
প্রশ্ন : কি রকম চরিত্র পছন্দ করবেন করতে ?
সঞ্জীব : চরিত্র তো চরিত্রই হয়। তবে করতে চাই বেশ কিছু চ্যালেনজিং চরিত্র যেখানে অনেক শেড আছে।
তবে সম্পূর্ণটাই নির্ভর করছে এবং আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, কে কি ভাবে আমায় দেখছেন এবং আমার কাছে তারা কেমন অভিনয় চাইছেন।
এক্ষেত্রে মেগাটা খুব চাপের। যদি না আগে থেকে চরিত্রটা বোঝানো থাকে। মেগায় প্রধান চরিত্রগুলো নিয়ে আগে থেকেই কাজ হয় যেমন ফিল্মে হয় কিন্তু মেগায় মাঝপথে ঢুকলে চরিত্রের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে একটু সময় লাগে, ফলে এক দুদিন না গেলে ঠিক অভিনয়টা ভেতর থেকে আসেনা।
আমার নেগেটিভ চরিত্র করতে বেশ লাগে।
প্রশ্ন : অভিনয় ছাড়া আর কি কি করতে ভালোবাসেন ?
সঞ্জীব : নানান বই পড়তে, ঘোড়ায় চড়তে আর রাইফেল চালাতে খুব ভালোবাসি।
ভালোবাসি নিজে ড্রাইভ করে লং ড্রাইভে যেতে। অবশ্যই পাশে বকবক করার একজনকে চাই..যদি সে মনের মানুষ হয় তবে তো কথাই নেই।
রান্না তো রোজই করি কিন্তু সময় পেলে নতুন রান্নার এক্সপেরিমেন্ট করতে খুব ভালো লাগে।
প্রশ্ন : পাহাড়, সমুদ্র না জঙ্গল ?
সঞ্জীব : ভালোবাসি সমুদ্রের উদ্দামতা, পাহাড়ের গম্ভীরতা আর জঙ্গলের গভীরতা.. তিনটেই।
প্রশ্ন : সামনে পূজো, প্ল্যান কি ? কারোর সঙ্গে…
সঞ্জীব : আরে না না.কোনো বিশেষ প্ল্যান নেই ভাই। আসলে পূজো আসলেই আমি অনেক কিছু মিস করি।
কিন্তু আর যে বেশি সময় নেই..ভাই..
সব কি একসঙ্গে, একইদিনে জেনে নেবেন নাকি ! (হাসি)
প্রশ্ন : না না..আর সময় নেবো না..অনেক ধন্যবাদ আপনাকে..
সঞ্জীব : আবার পরে হবে..অন্য কোনোদিন। খুব ভালো লাগলো আপনাদের সঙ্গে কথা বলে। ভালো থাকবেন..আর আপনাদের সবাইকে শারদীয়ার আগাম প্রীতি শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা জানিয়ে রাখলাম।
প্রশ্ন : আপনাকেও জানালাম। আপনার ভালো ভালো কাজ দেখার ইচ্ছে রইলো..নমস্কার।
সঞ্জীব : নমস্কার
ছবি : বুলান
GIPHY App Key not set. Please check settings